ঘুমের সময় মুখ দিয়ে কেন লালা পড়ে, প্রতিকার কী

ঘুমের মধ্যে অনেকের মুখ থেকে লালা পড়ে। বিষয়টি স্বাভাবিক হলেও খুবই বিভ্রান্তকর। অনেকে এ সমস্যা থেকে মুক্তি চাইলেও জানেন না কী করতে হবে। উইকিহাউ এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম ও অভ্যাসে পরিবর্তন করলেই মুক্তি পাওয়া যাবে এ অভ্যাস থেকে। চলুন জেনে নেওয়া যাক লালা পড়া বন্ধে কী করণীয়-

চিত হয়ে ঘুমানোর অভ্যাস

উপুড় বা কাত হয়ে ঘুমানোর ফলে মাধ্যাকর্ষণের টানে মুখ দিয়ে লালা বেরিয়ে যায়। এতে লালা গাল বেয়ে বালিশ এবং কখনো কখনো কম্বল পর্যন্ত পৌঁছে, যার ফলে বালিশ ও কম্বল ভিজে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়। এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে চিত হয়ে ঘুমানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন। এ ছাড়া, রাতে কাত বা উপুড় হয়ে ঘুমিয়ে পড়া এড়াতে সচেতনভাবে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করুন।

উঁচু বালিশ ব্যবহার

প্রতিদিনের ব্যবহার করা বালিশের দিকে একটু নজর দিন। সম্ভবত আপনার বালিশটি বেশি নিচু। ঘুমানোর সময় মাথা যেন শরীরের সমতলের চেয়ে সামান্য উঁচুতে থাকে, তা নিশ্চিত করুন। মাথা যদি শরীরের তুলনায় কিছুটা উঁচু থাকে, তবে মুখ বন্ধ থাকবে এবং স্বাভাবিকভাবে লালা পড়ার সমস্যা কমে যাবে।

মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়া বন্ধ করা

অনেকেই ঘুমের সময় নাকের পরিবর্তে মুখ দিয়ে শ্বাস নেন। যা ফলে মুখ দিয়ে লালা পড়ে। নাকের ন্যাসাল সাইনাস বন্ধ বা আটকে থাকলে মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। তাই ঘুমের সময় নাক দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। যদি নাকে সাইনাসের সমস্যা থাকে, তবে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ইউক্যালিপটাসের মতো এসেনশিয়াল তেল ব্যবহার করুন। এটি সাইনাসের সমস্যা থেকে কিছুটা সুরক্ষা দেয় এবং ঘুমের মান উন্নত করে। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াযুক্ত ওষুধ সেবন

কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে অতিরিক্ত লালা তৈরি হতে পারে। যার ফলে ঘুমের সময় মুখ দিয়ে লালা পড়ে। ওষুধ সেবনের ক্ষেত্রে এটি এই সমস্যার কারণ কি না, তা নির্ধারণ করার চেষ্টা করুন। যদি ওষুধটি স্বল্পমেয়াদি হয়, তবে ডোজ শেষ হওয়ার পর সমস্যাটি সাধারণত ঠিক হয়ে যায়। তবে এরপরও লালা পড়া অব্যাহত থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

ঘুমের ব্যাঘাত

স্লিপ অ্যাপনিয়া বা ঘুমের ব্যাঘাতের কারণেও ঘুমের সময় মুখ দিয়ে লালা পড়তে পারে। তাই ঘুমে কোনো ব্যাঘাত হচ্ছে কি না, সেদিকে অবশ্যই নজর রাখতে হবে। নাক ডাকা, ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস এবং লালা পড়া এই রোগের প্রধান লক্ষণ। সাধারণত ধূমপান, উচ্চ রক্তচাপ বা স্ট্রোকের ঝুঁকি থাকলে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রে স্লিপ অ্যাপনিয়ায় ভুগছেন এমন ১২ কোটি মানুষের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি ব্যক্তির ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ ও নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। কারণ, অতিরিক্ত ওজন শ্বাস-প্রশ্বাসে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে।

ঘুমের সময় লালা পড়া প্রতিরোধে বেশ কিছু সার্জারি পদ্ধতি রয়েছে, যেমন ইউপিও, সমনোপ্লাস্টি, ন্যাজাল সার্জারি, ম্যান্ডিবুলার অ্যাডভান্সমেন্ট সার্জারি এবং টনসিলেকটমি। যদি বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগ করেও লালা পড়া বন্ধ করা না যায়, তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সার্জারি বিবেচনা করা যেতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *